জীবনে প্রথম আলুর চপে কামড় দেওয়ার অনুভূতিsteemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

1200px-Aloo_Fritters_-_Howrah_2015-04-26_8541.jpg

Image Source : Copyright Free wikimedia Creative Commons


ছেলেবেলা থেকেই আমার তেলেভাজা খাবারের প্রতি অসম্ভব টান । এখনো সেই টান আছে পূর্ণ মাত্রায় । কিন্তু, বর্তমানে রোড সাইড ভেন্ডরস থেকে আর খাওয়া হয় না । তবুও সুযোগ পেলে ছাড়ি না । খাই এখনো । তেলেভাজা খাবারের মধ্যে আমার সব চাইতে প্রিয় হলো "আলুর চপ" । জীবনে তো আর কম তেলেভাজা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করিনি !

আলুর চপ, মোচার চপ, চিংড়ির চপ, ডিমের চপ, মাংসের চপ, ভেজিটেবল চপ, কড়াইশুঁটির চপ, এঁচোড়ের চপ, টমেটো চপ, বেগুনি, পেঁয়াজি, সিঙ্গাড়া, কচুরি, হিঙের কচুরি, মাংসের কচুরি, ডালপুরি, ফুলকপির সিঙ্গাড়া, মাংসের সিঙ্গাড়া, নারিকেল সিঙ্গাড়া, ডাল বড়া, ফুলুরি, সামুচা, ফিশ কাটলেট, চিকেন কাটলেট, মাটন কাটলেট, ডালের পকোড়া, চিংড়ির পকোড়া, চিকেন পকোড়া, ফুলকপির পকোড়া, চিকেন ফ্রাই, চিকেন ললিপপ, মোগলাই ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এদের মধ্যে আমার সব চাইতে বেশি ভালো লাগে আলুর চপ । কামড় দিলে মনে হয় স্বর্গে আছি । তবে, মজার ব্যাপার কি জানেন জীবনে প্রথম আলুর চপ খেয়েছি একদম ছেলেবেলায় কিন্তু নয় । বরং বেশ বড়বেলায় ।

গ্রামে থাকতে কোনোদিনও আলুর চপ খাওয়ার সুযোগ হয়নি । একদম অজ পাড়াগাঁ যাকে বলে তাই ছিল আমার গ্রামের বাড়ি । কিচ্ছু পাওয়া যেত না । পুজোর সময় যখন মেলা বসতো তখন এসব উঠতো মেলায় । কিন্তু, পাঁপড়, ঘুগনি আর নানান মিষ্টি খেতাম আমরা । তেলেভাজা খাওয়ার উপরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল । তাই গ্রামে থাকতে এসব কোনোদিন খাওয়া হয়নি ।

ক্লাস ফোরে উঠে চিরদিনের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসি আমরা । ব্যাস, আর পায় কে আমাকে । এই শহরে এসেই জীবনে প্রথম স্বাদ পেলাম সেই স্বর্গীয় খাবারের । মনে আছে তখন নতুন ক্লাসে উঠেছি । ক্লাস সিক্স । নিজেকে খুব বড় ভাবা শুরু করে দিয়েছি তখন আমি ।

জানুয়ারি মাসের এক শীতার্ত সন্ধ্যা । বেড়াতে বেরিয়েছে । সান্ধ্য ভ্রমণ যাকে বলে । আমরা তখন থাকতুম ভাড়া বাড়িতে । তো আমাদের পাশেই থাকতো একটা ছেলে । গ্রাম থেকে শহরে এসেছে চাকরির খোঁজে । চাকরি যদ্দিন না পাওয়া যায় তদ্দিন প্রাইভেট টিউশানি করে বেড়াতো সে । শুধু সপ্তাহে একদিন পড়াতে যেত না ।

তার সাথে আমার ভীষণ ভাব ছিল । ছেলেটির নাম ছিল ধর্মদাস । তো আমার বাবার অনুমতি নিয়ে প্রত্যেক সপ্তাহের ৩-৪ দিন বিকেল বেলায় আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতো । আমরা টো টো করে শহরময় হেঁটে বেড়াতাম । ছোট্ট শহর । দেখার আর তেমন কিছু ছিল না । তবুও ছোটবেলায় আমার কাছে সেটা বিরাট বড় একটা শহর মনে হতো ।

তো সারাটা বিকেল বেড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম । একদিন বাবা কিছু টাকা দিলো আমার হাতে বেড়াতে বেরোনোর আগে । বললো কিছু কিনে খেতে । এর আগে কোনোদিনও আমার হাতে পয়সা-কড়ি কিচ্ছু দেয়নি । সেদিন কি মনে করে জানি দিলো ।

সেই টাকা দিয়ে জীবনে প্রথম খেলাম আলুর চপ । সঙ্গী আমার ধর্মদাস । সেই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো শহরের একটা জমজমাট মোড়ে । সেখানে প্রচুর তেলেভাজার দোকান । সুগন্ধে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় । ধর্মদাস আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিনে ফেললো প্রকান্ড একটা ঠোঙায় আলুর চপ আর বেগুনি । অনেকগুলি ।

ভীষণ গরম সেই আলুর চপ একটু দাঁতে কেটে কিছুটা চিবোতেই তার স্বাদ টের পেলাম । এ যে স্বর্গীয় খাবার । আহ কি আস্বাদ তার ! অসম্ভব টেস্টি গরামগরম আলুর চপ । খুব গরম তাই পুরোটা একবারে খেয়ে নিতে চাইলেও পারছি না । অল্প অল্প করে ভেঙে মুখে দিতে লাগলাম, আর নরম নরম ঝাল ঝাল গরম আলুর পুরটা মুখের ভেতর মিলিয়ে যেতে লাগলো । জাস্ট অসাধারণ !

মনে আছে সেদিন আমি আটটা আলুর চপ খেয়েছিলাম । এত ছোট ছেলে এতগুলো আলুর চপ খেয়ে ফেলাতে ধর্মদাস একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো । যদি আমার শরীর খারাপ করে তাহলে আমার বাবার বকুনি আছে তার কপালে । যাই হোক কিছুই হয়নি সেদিন আমার অতগুলো আলুর চপ খেয়েও । তবে রাতে আর সেদিন ভাত খেতে পারিনি ।

সেই যে আলুর চপের প্রেমে পড়ে গেলাম, সেই প্রেম এখনো পূর্ণমাত্রায় "টিকিয়া" আছে 😂😂😂


✡ ধন্যবাদ ✡



পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)


তারিখ : ২৩ মার্চ ২০২৩

টাস্ক ২১৩ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : bb4ceab67dafa51782375920cc66cae1cafb713afe16cc4134a60967e40dcbde

টাস্ক ২১৩ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

কবির মাঝে আলুর চপের প্রেম পূর্ণ মাত্রায় টিকিয়া থাকুক সেই প্রত্যাশা আমরাও সব সময় করি। তবে আলুর চপ খাওয়ার কাহিনী শুনে বেশ ভালো লাগলো।

very intresting

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

দাদা কি আর বলবো, আজ অন্য রকম পোস্ট পেলাম।আর খুব ভাল লাগলো। সত্যি কথা এটাই যত চপের কথাই বলেন না কেন, বেসনে চুবানো আলুর চপের তুলনা হয় না। 😋 অনেক ভাল লাগলো আজ এই অন্য রকম অনুভূতির গল্প পড়ে। অনেক ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

প্রথম কোন কিছু খাওয়ার আনন্দ কিংবা অনুভূতি সত্যি আলাদা রকমের। প্রথমবারেই আটটা আলুর চপ খেয়ে ফেলেছেন দাদা😱। জেনে সত্যি অবাক হলাম। তবে যাই বলুন না কেন এই চপ জাতীয় খাবার গুলো আমাদের সবার অনেক প্রিয়। আপনার অভিজ্ঞতার কথা জেনে সত্যিই ভালো লেগেছে।

 2 years ago 

ওয়াও দাদা তো দেখি যত রকম চপ আইটেম সব উল্লেখ করেছেন ৷ আমার কাছেও অনেক ভালো লাগে আলুর চপ কারন কামড় দিলে অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে ৷

মচমচে ভাজি চপ গুলো খেতে যে এতো টেষ্টি লাগে ৷ তবে বাড়ির চেয়ে মেলা বাজারে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় ৷ আপনার প্রথম আলুর চপ খাওয়ার অনুভুতি পোষ্ট টি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷

 2 years ago 

দাদা যত গুলো তেলে ভাজা খাবার বা চপের নাম বললেন এত গুলো খাবার আমি এখনোও খায়নি। আর ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় আপনি আটটি আলুর চপ খেয়ে ফেললেন,শুনে একটু অবাকই হলাম। দাদা পরে কি আর ঐ মোড়ে গিয়েছিলেন,আলুর চপ খাওয়ার জন্য..?

 2 years ago 

দাদা, জীবনে প্রথম আলুর চপে কামড় দেওয়ার অনুভূতিটুকু যেভাবে তুলে ধরেছেন তা আর কি বলবো। শেষ অব্দি এসে নরম নরম ঝাল ঝাল গরম আলুর পুরটা মুখের ভিতর মিলিয়ে যেতে লাগলো, কথাটি যেভাবে বললেন আহা!! কি বলবো দাদা আমার তো মনে হচ্ছে এখনই আলুর চপ খেয়ে নিতে। ক্লাস সিক্সে উঠার পরে জীবনে প্রথমবার আটটা আলুর চপ খেয়ে আপনি তো রেকর্ড করে ফেলেছেন দাদা। এজন্যই তো ধর্মদাস চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। যাক বাবা বড্ড বাচা বেঁচে গেছেন আপনার কিছুই হয়নি, এতগুলো চপ খেয়ে 🤪।

Your post has been rewarded by the Seven Team.

Support partner witnesses

@seven.wit
@cotina
@bangla.witness
@xpilar.witness

We are the hope!