গল্প-মনের অন্তরালে||

in আমার বাংলা ব্লগ23 hours ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। মাঝে মাঝে গল্প লিখি। আর গল্প লিখতে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। গল্প লেখা আমার এক প্রকারের নেশা বলতে পারেন। সময় পেলেই গল্প লিখি। তেমনি আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করবো। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


মনের অন্তরালে:

people-2565169_1280 (1).jpg

Source


মুখোমুখি বসে আছে দুজনে। নিশ্চুপ দুটি হৃদয়। শুধু এক পলকের একটু দেখায় যেন পুরনো সব স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে। সময়টা ছিল অনেক আগের। আজ দুজনের জীবন আজ দুদিকে চলে গেছে। বদলে গেছে জীবনের ধারা। বদলে গেছে আপন মানুষগুলো। কিন্তু মনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সেই ভালোবাসা বোধয় এখনো আগের মতই আছে। কথাগুলো ভাবছিলো আর দুচোখে অদ্ভুত এক কষ্ট ভেসে উঠছিল নীলিমার। আজ বহু বছর পর সুমন তার সামনে বসে আছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তার যেন সুখের সংসার। নীলিমার দুচোখের স্বপ্নগুলো আজ বিলীন হয়েছে। সুমন নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আজ তারা তাদের জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পেরেছে।


নীলিমা আর সুমন দুজনকে ভালোবেসে ছিলো। নীলিমার কাজল কালো আঁখির মায়ায় পড়েছিল সুমন। কলেজের প্রথম দিন তাদের দেখা হয়েছিল। নীলিমা ছিল বড্ড সাদামাটা একটি মেয়ে। তার ভেতরে ছিল না কোন অহংকার। মায়াবী চোখের জাদুতে পাগল করেছে সুমনের হৃদয়। সুমন প্রথম দেখাতেই নীলিমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কিছুটা সময় পার হয়ে গেল তখন সুমন নিজের ভালোবাসার কথা বলেছিল। নীলিমা ভয়ে আতকে উঠেছিল। কারণ সে যে ভালোবাসতে বড্ড ভয় পায়। এরপর থেকেই নীলিমা সুমনের থেকে আড়ালে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতো। অন্যদিকে সুমন পাগলের মত তাকে ভালোবেসে ছিল।


সুমন নীলিমাকে ভুলতে পারছিল না। সারাক্ষণ নীলিমার পিছু ছুটে বেড়াতো। একদিন নীলিমা বাধ্য হয়ে তার জীবনের কিছু সত্যি কথা প্রকাশ করে। নীলিমা যখন ১২ বছরে পা দিয়েছিল তখন তার জীবনে ঘটে গিয়েছিল একটি দুর্ঘটনা। তখন থেকে নীলিমা অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে। চঞ্চল প্রকৃতির সেই মেয়েটার মুখে কোন হাসি নেই। তবুও বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ১২ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। কিশোরী বয়সের সেই কষ্টটা আজও মনে চেপে রেখেছে মেয়েটি। নীলিমার জীবনের এই বাস্তবতা যখন তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন ভালোবাসাকে বড্ড ভয় পায় মেয়েটা।


নীলিমার মুখে এই কথাগুলো শুনে সুমন তার মুখের ভাষা নেই। আজ শুধু নীলিমার মায়াবী চোখের কোণে এক ফোঁটা জল দেখতে পেয়েছিল। ছেলেটি কেন জানি সেই জলের মাঝেও ভালোবাসা খুঁজে ছিল। সুমন তাকে অনেক ভালোবেসেছিল। তাই তার অতীতকে মেনে নিয়েছিল সুমন। ধীরে ধীরে নীলিমার মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। সুমনকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল মেয়েটা। যেই মেয়েটি কাউকে বিশ্বাস করতে ভুলে গিয়েছিল সেই মেয়েটি এখন সুমনকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। কিন্তু হঠাৎ একদিন নীলিমা জানতে পারল সুমনের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। সুমন নীলিমাকে নিয়ে তার মায়ের সামনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু নীলিমার জীবনের অতীতের কথা শুনে সুমনের মা তাকে ময়লা আবর্জনার মত ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। একটি মেয়ে হয়ে কিংবা একজন মা হয়ে নীলিমার মনের কষ্টটা বুঝতে পারেননি তিনি।


সেদিনের পর থেকে নীলিমার সাথে আর কোন কথা হয়নি সুমনের। সুমন অনেকবার চেষ্টা করেছে নীলিমার খোঁজ নিতে। কিন্তু নীলিমা যে আড়ালে লুকিয়ে গিয়েছিল। কারণ সে আবারো তার জীবনে আরো অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে। সে স্বাভাবিক হতে চাইলেও সমাজ তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়েছিল নীলিমা। আজ বহু বছর পর যখন নিজের অতীত জীবনের মুখোমুখি হয়েছে নীলিমা তখন কোথাও যেন তার ভেতরে লুকানো কষ্টটা চোখে মুখে ভেসে উঠছে। কিন্তু আজ সুমনের মা বুঝতে পেরেছে একটি মেয়ের কষ্ট। কারণ সুমনের ছোট বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাকে নিয়েই হসপিটালে এসেছে তারা। আর নীলিমা সেই হসপিটালে চাকরি করে। তাইতো তাদের সাথে দেখা হয়ে গেছে। আজ সুমনের মায়ের মুখে কোন কথা। হয়তো সে নিজের মেয়ের মাধ্যমে নীলিমার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। নীলিমার মনের সেই কষ্টটা আজও মনের অন্তরালে রয়ে গেছে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 19 hours ago 

আপু আপনার লেখা আজকের এই গল্পটা পড়ে আমার চোখে জল চলে এসেছে। একটা মেয়ের কষ্টটা যদি একটা মা বুঝতে না পারে তাহলে মেয়েটা কিরকম পরিস্থিতির মধ্যে থাকবে। সুমনের মা নীলিমার কষ্টটা বুঝতে পারেনি প্রথমে। কিন্তু শেষে তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন। গল্পটা সত্যি অনেক বেশি কষ্ট হয়েছিল। অনেক সুন্দর করে আপনি গল্পটা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। অনেক ভালো লাগলো।

 17 hours ago 

নীলিমার জীবনে লুকিয়ে থাকা কষ্টের কথাটা শুনে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। নীলিমা যদিও সুমনকে বিশ্বাস করা শুরু করে দিয়েছিল, কিন্তু সুমনের মায়ের জন্য সে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে শেষ পর্যন্ত পায়নি। সুমনের মা নীলিমার কষ্টটা বুঝতে পারেনি। কিন্তু যখন ঘটনাটা নিজের মেয়ের সাথেও ঘটেছে, তখনই তিনি বুঝতে পেরেছেন। আর এই জন্যই তো উনার মুখে কোন কথা নেই। বাস্তবতা বড়ই কঠিন তবে মানুষের কষ্টটাকে বোঝা দরকার। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে সুমনের মায়ের এই বিষয়টা বুঝতে। যাই হোক খুব ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে।